আমরা এমন ভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের

আমরা এমন ভাবে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মধ্যে আসক্ত হয়ে গেছি যে কোন বই পড়তে গেলে আমাদের অনিহার সৃষ্টি হয় বই পড়তে ভালো লাগে না।বই পড়ার মাঝে কোন আনন্দ পাই না। বই পড়তে গেলে ঘুম চলে আসে বই পড়তে মনোযোগ দিতে পারি না। আমরা গল্পের বই কিভাবে পড়বো পাঠ্য বই কিভাবে পড়বো বই পড়ে নোট করবো কিভাবে এবং বই পড়ে পড়া মনে রাখবো কিভাবে সকল সমস্যার সমাধান এই ব্লকটি।



কেন বই পড়বেন

বই পড়তে হবে জীবনে সফল হওয়ার জন্য। মানবজীবন আকাঙ্ক্ষায় পরিপূর্ণ।মানব হৃদয়  আকাঙ্ক্ষার বীজতলা।স্বপ্ন পূরণে সফল হতে চাই সবাই আর সেটাকে একমাত্র বই পড়ার মাধ্যমে সম্ভব। যারা সফল তারা সকলেই অধ্যাবসায়ী সফলতার পেছনে একাগ্র চিত্তে নিরন্তন ছুটে চলে তারা। সামনে বাধা এলে পিছপা না হয়ে ধৈর্য সহকারে গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য কঠোর পরিশ্রম করেন।

আমরা সবাই জানি বই পড়া অনেক উপকারিতা আছে। ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু হওয়ার আগে মানুষের সময় কাটানোর অন্যতম মাধ্যম ছিল বই পড়া কিন্তু বর্তমানে আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপর এতটাই আসক্ত হয়েছি যে আমাদের বই পড়তে ইচ্ছে করেনা। বই পড়ার বিষয়টি খুব কম চিন্তা করি কিন্তু বই পড়ার কিছু উপকারিতা আছে যেগুলো জানতে পারলে যে কেউ বই পড়ার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।
1.মস্তিষ্কে কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি
মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার বৃদ্ধির জন্য প্রতিদিন বই পড়তে হবে। একটি গবেষণা জানা গেছে যে প্রতিদিন বই পড়ার মাধ্যমে মানুষের মানসিক রোগের প্রক্রিয়া ধির হয়। একজন মানুষের শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেমন প্রতিদিন ব্যায়াম করা দরকার তেমনি মস্তিষ্ককে সুস্থ রাখতে হলে প্রতিদিন বই পড়া দরকার।
2. শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি
প্রতিদিন বই পড়ার মাধ্যমে আমরা নিত্যনতুন শব্দের সাথে পরিচিত হই। যা আমাদের বাস্তব জীবনের অনেক প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে। তাছাড়াও ভাষার উপর দক্ষতা ও নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়। স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়। গল্পের বই পড়তে গেলে আমাদের বিভিন্ন চরিত্রের সাথে পরিচিত হতে হয় যেগুলো মনে রাখা আবশ্যক। যার ফলে আমাদের স্মৃতিশক্তির উন্নতি হয়।
3. বিনোদনের মাধ্যম
আমরা বিনোদনের জন্য সিনেমা ও গান শুনতে টাকা খরচ করি। কিন্তু কেন? বই পড়ার মাধ্যমেও তো আমরা বিনোদন পাই। সুন্দর সুন্দর গল্প, নাটক, উপন্যাস আছে যেগুলো একবার পড়লেই বারবার পড়তে ইচ্ছা করে। যার মাধ্যমে আমরা মানসিক শান্তি পাই ও চিন্তামুক্ত থাকি। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো বই পড়লে খরচ কম হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে বিনোদন পাওয়া যায়।
এছাড়াও নিয়মিত বই পড়লে একটা অভ্যাসে পরিণত হয় এবং আমাদের জানার পরিধিও বাড়ে। একবার অভ্যাসে পরিণত হয়ে গেলে আর ছাড়তে ইচ্ছে করবে না।

আমরা বই পড়ে কেন আনন্দ পাই না

আমরা বই পড়ে আনন্দ পাই না তার কারণ হচ্ছে আমরা পড়তে বসলে আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন চিন্তা ভাবনা গুলো মাথার মধ্যে নিয়ে আসি। যার ফলে আমাদের পড়তে বসার পরে পড়তে ইচ্ছে করেনা দৈনন্দিন জীবনে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ঘটনাগুলো আমাদের মনে পড়ে এবং আমাদের মনোযোগ নষ্ট হয়।
তাই যখন আমরা পড়তে বসবো তখন পৃথিবীর সব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়াশোনা করব এবং পড়তে বসলে মনোযোগ নষ্ট হয় এমন কোন সামগ্রী আমাদের আশেপাশে রাখবো না। এক দুই ঘন্টা পড়লেও মনোযোগ দিয়ে পড়বো এবং থমথমে ও নীরব পরিবেশে পড়বো। আর থমথমে পরিবেশে পড়তে বসলে আমরা সম্পূর্ণ মনোযোগটা পড়ার মধ্যে দিতে পারব আর একবার মনোযোগ করার মধ্যে দিতে পারলে বই পড়তে আমরা আনন্দ পাব।
বিশেষ করে তখন বেশি আনন্দ পাব যখন আমরা কোন ম্যাথমেটিক্যাল সমস্যার সমাধান নিজে নিজেই করতে পারব। তখন আমাদের পড়তে অনেক ইচ্ছা করবে।

আমরা বই পড়াতে মনোযোগ দিতে পারি না কেন

আমরা বই পড়তে বসলে মনোযোগ দিতে পারি না তার কারণ আমরা পড়তে বসলে সাধারণত আমাদের পড়ার সমস্ত উপকরণগুলো নিয়ে পড়ার টেবিলে বসি না। যার ফলে পড়তে বসলে কোন উপকরণ সামগ্রী প্রয়োজন পড়লে সেটা নিতে যাই এবং আমাদের মনোযোগটা নষ্ট হয়ে যায়। তাই পড়তে বসার পূর্বে প্রয়োজনীয় উপকরণ সামগ্রী যেমন বই, কলম, খাতা, পেন্সিল, স্কেল, ক্যালকুলেটর, পানির বোতল ইত্যাদি গুছিয়ে নেওয়ার পরে পড়তে বসবো। যাতে পড়তে বসে কোন কিছুর প্রয়োজন হলে আমরা হাতের কাছে পেয়ে যাই।

এছাড়াও শব্দযুক্ত পরিবেশে পড়তে বসলে মনোযোগ নষ্ট হয়। বিশেষ করে শহরে যারা থাকেন তাদের এই সমস্যাটা বেশি হয়। তাই আপনারা চেষ্টা করবেন নিরব পরিবেশে পড়তে বসার। বাসায় ছোট বাচ্চা থাকলে তারা যেন ডিস্টার্ব না করতে পারে এমন পরিবেশে পড়তে বসুন এবং নিয়মিত পড়াশুনা করুন।

অনেক সময় পাশাপাশি দুইজন একসাথে পড়াশোনা করলেও পড়ার মনোযোগ নষ্ট হয়। বিশেষ করে যারা মেসে থাকে তাদের এই সমস্যাটা বেশি হয়। কাজেই চেষ্টা করবেন দুইজনে মধ্যে দূরত্ব রাখার এবং সেই সময়টা মনে মনে পড়বেন। যেন একে অপরের সমস্যা না হয়।

বিশেষ করে সকাল বেলায় পড়াশুনা করার চেষ্টা করবেন। সেই সময় পরিবেশটা অনেক ঠান্ডা থাকে এবং ব্রেইন অনেক স্বচ্ছ থাকে এবং কাজ করে বেশি। সকালবেলা পড়তে বসলে পড়া মনে থাকেও বেশি ব্রেইনের উপর প্রেসার কম পড়ে। তাই সম্ভব হলে সকালবেলা পড়তে বসবেন।

গল্পের বই পড়ার নিয়ম

গল্পের বই পড়ারও আলাদাভাবে নতুন কোন নিয়ম নেই। তবে আপনারা গল্প পড়ার আগেই সেই গল্পের চরিত্রগুলো একটু ভালোভাবে পড়ে নিবেন এবং সিরিয়াল বাই চরিত্রগুলো পড়বেন তাহলে মনে থাকবে বেশি। তবে আপনারা ফ্রি টাইমে প্রতিকূল পরিবেশে মনোরম পরিবেশে বা মন ভালো থাকে না এমন সময় করতে পারেন। তাহলে দেখবেন মন খারাপ থাকলে মন ভালো হয়ে যাবে এবং ভালোলাগা কাজ করবে।

পাঠ্য বই পড়ার নিয়ম

পাঠ্য বই পড়ে পড়া মনে রাখতে হলে আপনাদেরকে অনেক কৌশলী হতে হবে। কৌশল আছে সেগুলো অবলম্বন করলে আমাদের পড়াটা সহজে আয়ত্তে চলে আসবে এবং দীর্ঘদিন মনে থাকবে। সেগুলো সম্পর্কে কিছু ধারনা দেই আপনাদের।

বাংলা পাঠ্য বই যেভাবে পড়বেন
বাংলা পাঠ্য বইয়ের সাধারণত দুইটি অংশ। একটা পদ্যাংশ আরেকটি গদ্যাংশ তবে পড়ার সিস্টেমটা একই রকম। প্রথমে আপনারা যেই পদ্ম অথবা গদ্য টা পড়বেন সেটা নির্বাচন করে নিবেন। সর্বপ্রথমে লেখক পরিচিতি ভালো করে পড়বেন। তারপরে পাঠ পরিচিতিটা ভালোভাবে পড়বেন একদম মুখস্ত টাইপের তাহলে গল্পটা সম্পর্কে আপনি ভালো একটা ধারণা পেয়ে যাবেন।

তারপরে আপনি সেই গল্পের প্রশ্নগুলা একবার চোখ বুলিয়ে নিবেন তাহলে আপনি ধারণা পেয়ে যাবেন গল্পটা পড়ার সময় আপনাকে কোন লাইনগুলো বেশি ফোকাস দিয়ে পড়তে হবে। কে আপনি গল্পটা মনোযোগ দিয়ে দুই থেকে তিনবার পড়ে নিবেন তাহলে দেখবেন অনায়াসে আপনি সব প্রশ্ন সলভ করতে পারতেছেন।
বিজ্ঞান বিভাগের বইগুলো যেভাবে পড়বেন
যারা বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেন তারা সচরাচর সবাই অনলাইনে বা অফলাইনে যেকোনো একটা কোচিং সেন্টারে বা প্রাইভেট সেন্টারে ভর্তি হয়ে থাকেন কিন্তু সঠিক গাইড লাইনের অভাবে আপনারা পড়াটাকে গুছিয়ে নিতে পারেন না। নিজের দুর্বলতার কথাগুলো মানুষের সামনে শেয়ার করতে লজ্জা পান। তাহলে আপনি এই ট্রিক্স গুলো মানতে পারেন।

প্রথমে আপনি আপনার টিচার যে পড়াটা পড়াবে সেটা বাসায় এসে একবার রিভিশন দিয়ে দিবেন 30 মিনিটের মতো। তারপরে এই টপিকটা আপনি বোর্ড বই খুঁজে বের করবেন এবং বোর্ড বইটি একবার রিভিশন দিয়ে দিবেন। রিভিশন দিতে গিয়ে সেই লাইনটা আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ হবে সেটা আন্ডারলাইন করে ফেলবেন।

এইভাবে একটা অধ্যায় সম্পন্ন শেষ করার পর অধ্যায়ের শেষের প্রশ্নগুলো সলভ করে ফেলবেন। যেগুলো সমস্যা হবে সেগুলো মার্ক করে রাখবেন। সেইগুলো সারের কাছ থেকে সলভ করে নিবেন এবং বারবার রিভিশন  করবেন। শুরু থেকেই যদি একটা অধ্যায় শেষ করে আপনার যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছা সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নগুলো যদি দেখে নেন তাহলে আরো ভালো হবে। আপনার এডমিশনের 80% পড়া কমপ্লিট হয়ে যাবে।
শুরু থেকে এইভাবে পড়াশোনা করলে ইনশাল্লাহ আপনি আপনার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন।

বই পড়ে নোট করার নিয়ম

আমরা বই পড়ে সবকিছু ভালোভাবে মনে রাখতে পারি না তাই আমাদের একটা নোট খাতার প্রয়োজন হয়। যদি আমরা প্রপারলি একটা নোট খাতা তৈরি করতে পারি তাহলে আমাদের পড়ার রিভিশন করতে কম সময় লাগে এবং পরবর্তী পারে পড়তে গেলে পড়াটা খুব দ্রুত মনে পড়ে। অনেকেই আছে অনেক ব্রিলিয়েন্ট। কিন্তু তাদের পড়াগুলো এলোমেলো। পড়াগুলো গোছানো না হওয়ায় যখন তারা রিভিশন করতে যায় তখন সবকিছু মনে থাকে না ভুলে যায় এবং ডিপ্রেশনে চলে যায় পড়তেও ভালো লাগে না। তাই পড়া শেষে লোক খাতার গুরুত্ব অনেক।

আপনারা যেইভাবে নোটকরতে পারেন প্রথমত আপনারা প্রতিটা বিষয়ের আলাদা আলাদা খাতা তৈরি করে ফেলবেন। আর একটা রাফ খাতা তৈরি করবেন। এই খাতাটি আপনি কলেজ, কোচিং, প্রাইভেট সব জায়গায় ইউজ করবেন। কিন্তু যেই পড়াটা আপনি রাফ খাতায় তুলবেন সেটা বাসায় এসে ৩০ মিনিট রিভিশন দেওয়ার পরে নিজের মতো করে প্রতিটা বিষয়ে আলাদা আলাদা ভাবে নোট করে ফেলবেন। এইভাবে কয়েক মাস কন্টিনিউ করলেই আপনি বুঝতে পারবেন আপনার লেভেল কোথায়।

বই পড়ে মনে রাখার নিয়ম

আমরা বেশিরভাগ মানুষই বই পড়ে পড়াটা মনে রাখতে পারি না। তার প্রধান কারণ হচ্ছে রেভিশনের অভাব। যত বেশি রিভিশন করবেন আপনার পড়া তত বেশি মনে থাকবে এবং সবার থেকে এগিয়ে থাকবেন। কাজেই প্রতিদিন অন্তত এক ঘণ্টা করে পূর্বের পড়াগুলো রিভিশন করবেন।

সব সময় যেইটা পড়বেন সেটা বেশি বেশি করে লিখবেন তাহলে দীর্ঘদিন মাথায় থাকবে। পড়ার চেয়ে লিখলে বেশি মনে থাকে। তার কারণ হচ্ছে লেখার সময় আমাদের মনোযোগটা ওই পড়াটার উপর বেশি থাকে তাই বেশি বেশি লেখার চেষ্টা করবেন।

শেষ কথা

সবশেষে এটাই বলব জীবনে যাই করেন না কেন পড়াশোনা ঠিক ঠাক ভাবে করবেন। এবং বেশি বেশি বই পড়বেন। পৃথিবীতে যত জ্ঞানীগুণী মনীষী রয়েছেন সবাই বই পড়ার মাধ্যমেই তাদের জীবনটাকে পরিবর্তন করেছেন। সুতরাং বই পড়ার কোন বিকল্প নেই সেটা যে কোন বই হতে পারে। জ্ঞান অর্জন করতে হলে আপনাকে বই পড়তেই হবে। ইতিহাসের পাতায় স্মরণীয় হতে চাইলে অবশ্যই আপনাকে জ্ঞানী হইতে হবে। সুতরাং নিজেই জ্ঞান অর্জন করুন এবং অন্যের মাঝে জ্ঞান বিলিয়ে দিন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

Edu tricks আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন প্রতিটি কমেন্টের রিভিউ করা হয় ;

comment url